...আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম___ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ...

ধর্মপালের শাসনকাল আলোচনা কর।


উত্তর: শশাঙ্ক ছিলেন বাংলার প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম গৌড়াধিপতি। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর অভ্যন্তরীণ কলহ এবং পার্শ্ববর্তী রাজাদের উপর্যুপরি আক্রমণে বাংলায় রাজতন্ত্র ফাংস হয় এবং এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থাকে বিভিন্ন ইতিহাসবেত্তা মাৎস্যন্যায় বলে অভিহিত করেছেন। মাৎস্যন্যায়ের অবসান হলে বাংলার সিংহাসনে বসেন গোপাল। গোপালের ক্ষমতা লাভ বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করে।

     খলিমপুর তাম্রশাসন হতে জানা যায় যে, দয়িতবিষ্ণু হতে বংশের উদ্ভব। খলিমপুর তাম্রশাসনে ধর্মপালকে ভদ্রাতুজ বর্ণনা করা হয়েছে। গোপালের স্ত্রী অর্থাৎ ধর্মপালের মা দন্দদেবী পূর্ববঙ্গের ভদ্র বংশের কন্যা ছিলেন। পরবর্তী পাল রাজাগণ পাল বংশের উৎপত্তি সম্পর্কে নানা প্রকার অলীক দাবি উত্থাপন করেন। এ সকল দাবির মূলকথা হচ্ছে- পালগণ সূর্য বংশীয় বা সমুদ্র বংশীয় বলে প্রচার করা। কিন্তু পরবর্তীতে পাল বংশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- কোন পৌরাণিক বীরের বংশধর বলে। নিজেদের দাবি না করা। তবে তিব্বতীয় যুরোহিত তারনাথ, সন্ধ্যাকর নন্দী প্রভৃতির রচনায় প্রমাণ পাওয়া যায় যে, পাল রাজাগণ ক্ষত্রিয় ছিলেন।

     পাল বংশের উৎপত্তি নিয়ে নানা মত থাকলেও বাংলার ইতিহাসে গোপাল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত পাল বংশ বংশ পরম্পরায় প্রায় চারশ বছর বাংলার শাসন ক্ষমতায় থাকেন।

     পাল রাজাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ধর্মপাল প্রায় ৪০ বছর রাজত্ব করেন (৭৮১-৮২১)। তিনি মগধ বা বিহার জয় করেন এবং পাটলিপুত্রে (পাটনায়) রাজধানী স্থাপন করেন। বাংলাকে উত্তর ভারতের শ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত করার কৃতিত্ব তাঁর। এজন্য তাঁকে দু'টি প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির সাথে দু'বার যুদ্ধ করতে হয়। এ যুদ্ধ তাঁকে করতে হয় রাজপুতনার গুর্জর প্রতীহার বংশের বিরুদ্ধে এবং দক্ষিণ ভারতের রাষ্ট্রকুট বংশের বিরুদ্ধে। তিনপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল বলে যুদ্ধগুলোকে ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধ বলে।

ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধের প্রথম পর্যায়: কনৌজের অধিকার নিয়ে ধর্মপালের সাথে গুর্জর প্রতীহার বংশীয় বৎসরাজের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ধর্মপাল পরাজিত হন। ঠিক এসময় দক্ষিণ ভারত থেকে রাষ্ট্রকুট রাজা ধ্রুবধারাবর্ষ উত্তর ভারতে অভিযান করেন। তিনি বৎসরাজকে পরাজিত করেন। ধর্মপালও ধ্রুবর সাথে যুদ্ধে পরাজিত হন। কিন্তু ধ্রুব কোনদিন উত্তর ভারতে থাকতে পারেননি। শীঘ্র তাঁকে নিজ দেশে ফিরতে হয়। ফলে লাভ হলো ধর্মপালের। তিনি তাঁর মনোনীত চক্রায়ুধকে কনৌজের সিংহাসনে বসান। অনেক রাজাই তাঁকে এ ব্যাপারে সমর্থন দেন। সুতরাং উত্তর ভারতে বাংলার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়: প্রথম ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পর গুর্জর প্রতীহার বংশের সাথে ধর্মপালের আবার যুদ্ধ বাধে। এবার গুর্জর প্রতীহারদের নেতা ছিলেন বৎসরাজের ছেলে দ্বিতীয় নাগভট্ট। যুদ্ধে ধর্মপাল পরাজিত হন। কিন্তু নাগভট্ট ক্ষমতা সুসংহত করার আগেই রাষ্ট্রকুট রাজার আগমন ঘটে। এ সময় রাষ্ট্রকুট রাজা ছিলেন তৃতীয় গোবিন্দ। তৃতীয় গোবিন্দের নিকট নাগভট্ট পরাজিত হন। ধর্মপালও গোবিন্দের নিকট নতি স্বীকার করেন। অল্পদিনের মধ্যে গোবিন্দকে দেশে ফিরে যেতে হয়। ফলে, সবচেয়ে বেশি লাভবান হন ধর্মপাল। তিনি বাকি জীবন শান্তিতে রাজত্ব করেন।   ধর্মপাল সুশাসক ও দক্ষ কূটনীতিবিদ ছিলেন। বাংলাকে তিনি উত্তর ভারতের শ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত করেন। ধর্মপাল বৌদ্ধধর্মের অনুসারী হলেও অন্য ধর্মের প্রতি তিনি উদার ছিলেন। তাঁর একজন হিন্দু মন্ত্রী ছিল। তিনি বিদ্যা ও বিদ্বানের সমাদর করতেন। বৃহত্তর রাজশাহী জেলার (নওগাঁ) পাহাড়পুরে একটি বিহার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। বিহারটির নাম ছিল সোমপুর বিহার। সে সময়ে এটি উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাকেন্দ্র ছিল। ভাগলপুরের কয়েক মাইল পূর্বদিকে তিনি আর একটি বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মপালের অপর নাম বিক্রমশীল। তাঁর এই নামানুসারে বিহারটির নাম হয় বিক্রমশীল বিহার।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url