জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো।
জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো।
ভাব-সম্প্রসারণ: বংশগৌরবে গৌরবান্বিত হওয়ার কিছু নেই। জন্মের ওপর মানুষের কোনো হাত নেই। এটা বিধাতার এক অপূর্ব লীলা। পূণ্য এবং কর্মময় জীবন যার তিনি যে বংশেই জন্মগ্রহণ করুন না কেন তিনি উৎকৃষ্ট মানুষ। অপরদিকে, গ্লানিতে ভরে আছে যার জীবন, সে নিকৃষ্ট মানুষ।
মানুষের কর্মই তার সত্যিকারের পরিচয়। জ্ঞানের দ্বারা মানুষের মূল্যায়ন করা অনুচিত। প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় অনেকেই বংশমর্যাদাকে বড় করে দেখেন কিন্তু এটা ঠিক নয়। কারণ বংশমর্যাদা মানুষকে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করতে পারে না। প্রাচীন সামন্তবাদী সমাজব্যবস্থায় আশরাফ এবং আতরাফ এ দুই শ্রেণির মানুষের অস্তিত্ব ছিল এবং তাদের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য ছিল অত্যন্ত প্রকট; কিন্তু বর্তমান সভ্যতায় মানুষের এ ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। ফলে মানুষের বৈষম্যের অবসান ঘটছে। এখন সমাজে মানুষের বংশ পরিচয় তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করে না। একজন মানুষ নীচু বংশে জন্মগ্রহণ করতেই পারে। তাই বলে কি তার কর্ম নীচু হতে হবে? বংশ পরিচয় নয়, কর্মফল দিয়ে, চরিত্রের মহিমা দিয়ে সে সমাজের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্য। নীচু বংশে জন্ম নিয়েও কর্মের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে যারা জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন এদের সংখ্যা কম নয়, বরং অধিকতর। বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক শেক্সপিয়ার নীচু ঘরের সন্তান ছিলেন। তিনি অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন। কীটসকে ওষুধ বেচে জীবিকানির্বাহ করতে হতো। জ্যোতির্বিদ পিথাগোরাসের বাবা কামারের কাজ করতেন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন একেবারে সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন শ্রমিক ছিলেন। ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ, তুরস্কের জাতির পিতা কামাল পাশা, ভারতের মহাত্মা গান্ধী, বাংলা ভাষার বিখ্যাত কবি কাজী নজরুল ইসলাম এরা সবাই সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আপন কর্ম দ্বারাই তারা অর্জন করেছেন দুনিয়াজোড়া খ্যাতি।
কর্মই মানুষকে মহৎ করে, বংশ পরিচয় নয়। এই পৃথিবীতে যারা মহান, যারা স্মরণীয় এবং বরণীয় ব্যক্তি, তারা বংশমর্যাদার বড়াই করে বড় হন নি, হয়েছিলেন সৎ কর্মের দ্বারা।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url