...আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম___ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ...

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজ আমরা বিস্তর আলোচনা করতে চলেছি। প্রাচীনকাল থেকে আমরা দেখে আসছি আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে অর্জুন গাছের ছালের। 

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতার সাথে আজ আমরা বিশেষভাবে আলোচনা করব, অর্জুন গাছের ছাল কিভাবে ভিজিয়ে খেতে হয়। তবে আর দেরি নয়।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে, অর্জুন গাছের প্রত্যেকটি অংশ ঔষধি গুণ সম্পন্ন উপাদানে ভরপুর। আমরা বিশেষভাবে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহারের বিষয়ে জানলেও অর্জুন গাছের অন্যান্য অংশ দিয়েও ব্যাপক উপকারী উপাদান তৈরি করা যায়। অর্জুন গাছের ছাল সহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে তৈরি ভেষজ থেকে কি কি উপকার পাওয়া যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা তুলে হলোঃ

* অর্জুন গাছের ছালে ফ্লাভোনয়েড উপাদান আছে, যা শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে পরিচিত। এই ফ্লাভোনয়েড উপাদান আপনার রক্তনালী প্রসারিত করে, যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। 
* আপনার দেহের ফ্রী র‍্যাডিকেল প্রতিরোধ করতে অর্জুন গাছের ছালের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এটি কোষের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে বয়স জনিত রোগ এবং ছাপ প্রতিরোধে ব্যাপক সহায়ক হয়ে থাকে। 
* অর্জুন ছালে ট্যানিন উপাদান রয়েছে, যা শক্তিশালী প্রদাহ নাশক হিসেবে পরিচিত। এটি আপনার বাত ও জয়েন্টের ব্যথা ও গ্যাস্ট্রিক জনিত বিভিন্ন ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে। 
* অর্জুন ছাল ব্যবহার করলে সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যাপক সহায়ক হবে, এটি আপনার বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং শরীরের ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। 
* অর্জুন ছালে স্যাপোনিন উপাদান রয়েছে, যা আপনার শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে রক্তনালীর ব্লক দূর করতে সাহায্য করবে। 
* অর্জুন ছালে স্যাপোনিন উপাদান রয়েছে, যা আপনার শরীরের মেটাবোলিজম বৃদ্ধি করবে এবং দ্রুত ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করবে। এটি আপনার ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। 
অর্জুন ছালে অ্যার্জুনিক অ্যাসিড রয়েছে,যা কার্ডিওটনিক হিসেবে কাজ করে, যার ফলে হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি হয় ও রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে। 
* অর্জুন ছালে থাকা উপাদান আপনার অনিদ্রা দূর করে দিতে পারে। এটি আপনার স্নায়ুকে শান্ত করবে, যার ফলে ভালো ঘুমের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। 
* অর্জুন ছালে ক্যালসিয়াম উপাদান রয়েছে, যা আপনার হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করবে ও দাঁত মজবুত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। 
* অর্জুন ছালে থাকা ক্যালসিয়াম উপাদান আপনার পিত্তের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করবে। এটি আপনার পিত্ত থলির পাথর তৈরি হওয়া প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। 
* অর্জুন ছালে থাকা ম্যাগনেসিয়াম উপাদান আপনার নার্ভ ফাংশন উন্নত করবে এবং স্নায়ু সুস্থ রেখে মানসিক চাপ কমিয়ে দেবে। 
* অর্জুন ছালে থাকা ম্যাগনেসিয়াম উপাদান আপনার পেশীর সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করবে। এটি আপনার পেশীর ব্যথা কমিয়ে পেশীর শক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। 
* অর্জুন ছালে জিংক উপাদান রয়েছে, যা আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে সংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। 
* অর্জুন ছালের জিংক উপাদান আপনার মুখের ব্রণ দূর করবে এবং ত্বক ভালো রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। 
* অর্জুন ছালে কপার উপাদান পাওয়া যায়, যা আপনার শরীরের লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করবে। এর মাধ্যমে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। 
* অর্জুন ছালে কপার উপাদান রয়েছে, যা আপনার ত্বকের মেলানিন উৎপাদনে সাহায্য করবে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে। 
* অর্জুন ছালে আয়রন উপাদান রয়েছে, যা আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে রক্তস্বল্পতা কমিয়ে দিতে পারে। 
* অর্জুন ছালে থাকা উপাদান আপনার শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং অক্সিজেন পরিবহন উন্নত করবে। 
* অর্জুন ছালে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়, যা আপনার ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হয়ে থাকে। এটি আপনার দেহের কোষকে ক্যান্সার কোষে রূপান্তরিত হওয়া থেকে রক্ষা করবে। 
* অর্জুন ছালে থাকা উপাদান আপনার লিভার থেকে টক্সিন দূর করে দিবে এবং ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করে লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে দিবে। 
* অর্জুন ছাল ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকের বয়স জনিত বলিরেখা ও কালো দাগ কমে যায়। যার ফলে ত্বক তরুণ থাকে। 
* অর্জুন ছালে রয়েছে ডাইইউরেটিক উপাদান, যা প্রাকৃতিক ভাবে আপনার কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করবে। 
* অর্জুন ছালে থাকা ডাইইউরেটিক উপাদান উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ ও পানি বের করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। 
* নিয়মিত অর্জুন ছাল  ব্যবহার করলে মূত্রনালির সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক হয়ে থাকে।

অর্জুন গাছের ছালের অপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালের অপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে, এই পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিনিষের ইচ্ছেমতো এবং এলোমেলো ব্যবহারের কারণে সমস্যা দেখা দেয়। প্রাকৃতিক যে কোন বিষয় গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালোভাবে জানতে হবে এবং পরিমাণ বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। অর্জুন ছালের  অতিরিক্ত ব্যবহারে কি সমস্যা হতে পারে, চলুন সে বিষয়ে জেনে নেই। 

* অর্জুন ছাল রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে রক্তচাপ আরও কমে যেতে পারে, যার ফলে শারীরিক বড় ধরনের সমস্যা হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা থেকে যায়। 
* কিছু ঔষধ সেবন কালে অর্জুন ছালের ব্যবহার ঔষধ এর কার্যকারিতা বাড়িয়ে বা কমিয়ে দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও রক্ত পাতলা কারী ঔষধ সেবন কালে অর্জুন ছাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। 
* অর্জুন ছাল অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করলে লিভারের উপর প্রভাব পড়তে পারে। যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে, কোনমতেই অতিরিক্ত ও দীর্ঘদিন অর্জুন ছাল ব্যবহার করবেন না। 
* অর্জুন ছাল কিছু মানুষের শরীরে অ্যালার্জি ও ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ জাতীয় সমস্যা থাকলে ভেবেচিন্তে অর্জুন ছাল ব্যবহার করবেন। 
* অতিরিক্ত অর্জুন ব্যবহার করলে অর্জুন এ থাকা বায়ো অ্যাকটিভ যৌগ আপনার কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলতে পারে। 
* অর্জুন এ থাকা ট্যানিন ও অন্যান্য উপাদান অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে দিতে পারে, যার ফলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
* অর্জুন ছালে কিছু উপাদান রয়েছে, যা আপনার রক্ত পাতলা করতে সাহায্য করে থাকে। যারা রক্ত পাতলা করা ঔষধ সেবন করেন, তাদের ক্ষেত্রে বুঝে শুনে অর্জুন ব্যবহার করতে হবে। 
* অর্জুনে থাকা কিছু উপাদান নার্ভাস সিস্টেমের উপর প্রভাব ফেলে থাকে, যার ফলে ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। 
* অর্জুন ছালে থাকা কিছু উপাদান হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে, থাইরয়েড ও প্রজনন হরমোনের উপর এটি ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে থাকে। 
* গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে অর্জুন ছাল ব্যবহার করলে জরায়ুর সংকোচন হতে পারে, যার ফলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা থেকে যায়। 

অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার সাধারণ পদ্ধতি 

উপকরণ 
* ১ চা চামচ অর্জুন ছালের গুড়া বা ২-৩ টুকরা ছাল। 
* ১ গ্লাস পানি 
* মধু 
১ গ্লাস পানিতে অর্জুন ছালের গুড়া বা টুকরা ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে এই পানি ছেঁকে নিয়ে মধু মিশিয়ে পান করতে হবে। ভালো ফলাফল পেতে প্রতিদিন সকালে এটি খাওয়া যেতে পারে। 

গরম পানিতে অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার পদ্ধতি 

উপকরণ 
* ১ চা চামচ অর্জুন ছালের গুড়া 
* ১ গ্লাস গরম পানি 
১ গ্লাস হালকা গরম পানিতে অর্জুন ছালের গুড়া মিশিয়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এটি ছেঁকে নিয়ে সকালে খালি পেটে পান করতে হবে। প্রয়োজনে সামান্য মধু বা লেবুর রস মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। 

অর্জুন ক্বাথ

উপকরণ 
* ১ চামচ অর্জুন ছালের গুড়া বা ২-৩ টুকরা ছাল
* ২ কাপ পানি 
অর্জুন ছাল ও পানি এক সাথে ১০ থেকে ১৫ মিনিট জাল দিতে হবে। পানি অর্ধেক হলে ছেঁকে নিতে হবে। ছেঁকে নেওয়া পানি হালকা গরম অবস্থায় পান করতে হবে। ভালো ফলাফল পেতে সকালে খালি পেটে বা রাতে ঘুমানোর আগে খাওয়া যেতে পারে। 

দুধের সাথে অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার পদ্ধতি 

উপকরণ
 * ১ গ্লাস দুধ
 * ১ চা চামচ অর্জুন ছালের গুড়া
* সামান্য মধু 
গরম দুধের মধ্যে অর্জুন ছালের গুড়া ৫ থেকে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভালোভাবে মিশিয়ে পান করতে হবে। স্বাদ বাড়ানোর জন্য সামান্য মধু ব্যবহার করা যেতে পারে। 

অর্জুন ছাল ভিজিয়ে পান করার ক্ষেত্রে সব সময় মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত পরিমাণে অর্জুন ছাল গ্রহণ করা দেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আপনি যদি রক্তচাপ বা হৃদরোগের ঔষধ খেয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদান কালে অর্জুন গাছের ছাল খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। নিম্ন রক্তচাপ বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে অবশ্যই অল্প পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url