...আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম___ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ...

সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত

ভাব-সম্প্রসারণ: শিক্ষা ও সুশিক্ষা দুটি ভিন্ন অবস্থা। শিক্ষা বলতে সাধারণত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে বুঝায়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আর একটি মৌল মানবিক জ্ঞানার্জন, মানুষের বিবেক বৃদ্ধি নৈতিকতার উন্নয়ন প্রভৃতি সুশিক্ষার সাথে সম্পর্কিত। শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই সুশিক্ষিত হওয়া যায় না। সুশিক্ষিত হতে হলে সৃজনশীল অনুভূতি এবং প্রায়োগিক প্রজ্ঞা অর্জন প্রয়োজন। কেননা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানশক্তি অর্জন। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। কেননা অন্যান্য প্রাণী বা জীবের চেয়ে জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক, আচার-আচরণ ও সৃজনশীলতা প্রভৃতি দিক থেকে মানুষ শ্রেষ্ঠ। প্রকৃতি ও জন্মগতভাবেই মানুষ অন্যান্য প্রাণির চেয়ে অধিকতর উন্নত বৈশিষ্ট্য বা গুণ নিয়ে পৃথিবীতে আসে। পরবর্তীতে পৃথিবীর আলো বাতাস পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে সে তার মানবীয় আচরণ আয়ত্ব করে এবং ধীরে ধীরে তার আচরণগত বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটে এবং একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। শিক্ষা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে মানুষের আচরণের পরিবর্তন বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে। একটি শিশুর জন্ম লাভের পর থেকেই তার শিক্ষা প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং এ প্রক্রিয়া তার মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে। তবে শিশু, কিশোর ও যৌবন এ সময়েই মানুষের শিক্ষণ প্রক্রিয়া সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কেননা একটি শিশুর আচরণ তার আগ্রহ, তার শিক্ষার ধরন বা অগ্রগতি দেখে অতি সহজেই অনুমান করা যায় শিশুটির ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে। উপযুক্ত পরিবেশ, সেবাযত্ন এবং উপযুক্ত শিক্ষা পেলে শিশুটি একদিন সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা সাধারণভাবে শিক্ষা বলতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকেই বুঝি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মূলত পরীক্ষা পাসের শিক্ষা।
বিদ্যায়তনের পড়াশুনা আজ জ্ঞানার্জনের জন্য নয়, জীবিকার্জনের জন্য। তাই বিদ্যায়তনের প্রচলিত শিক্ষায় উচ্চ ডিগ্রি নিলেই সুশিক্ষা লাভকরা যায় না। একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি যদি সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের প্রাকৃতিক কারণগুলো জানা সত্ত্বেও কুসংস্কারবশত নাককাটা, ঠোঁটকাটা সন্তান জন্মদানের ভয়ে তার স্ত্রীকে সে সময় মাছ বা তরকারি কাটতে নিষেধ করেন তাহলে বুঝতে হবে বিজ্ঞান শিক্ষার সাথে তার জীবনচর্চার সংযোগ ঘটে নি। এমন অনেক ডিগ্রিধারী ব্যক্তি আছেন যারা বৈজ্ঞানিক যুক্তিকে অস্বীকার করে কঠিন অসুখ-বিসুখের সময় তাবিজ-কবজ বা ঝাড়-ফুঁকের আশ্রয় নেন। এরূপ শিক্ষিত লোককে সুশিক্ষিত বলা সঙ্গত নয়। যে ব্যক্তি নিজের মনকে নানা রকম প্রথা ও সংস্কারে বেঁধে রেখেছেন, পরীক্ষায় পাস করে উচ্চ ডিগ্রি লাভ করলেও তাকে সুশিক্ষিত বলা যায় না। পক্ষান্তরে, অনেক স্বশিক্ষিত ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াও দেশ ও জাতি তথা বিশ্বমানবের কল্যাণের জন্যে অনেক কিছু করে গেছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ সক্রেটিস, এরিস্টটল, প্লেটো, নিউটন, গ্যালিলিও, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। তাঁরা স্ব-শিক্ষায় সুশিক্ষিত ছিলেন বলেই মরেও অমর হয়ে আছেন। শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের একটি ধারণা রয়েছে যে, শিক্ষক শিক্ষার্থীকে জ্ঞানদান করেন। প্রকৃতপক্ষে, শিক্ষক শিক্ষার্থীকে জ্ঞানদান করতে পারেন না। শিক্ষা দান সাপেক্ষ বিষয় নয়, গ্রহণসাপেক্ষ। শিক্ষকের কাজ শিক্ষার্থীর জ্ঞানস্পৃহা জাগিয়ে তোলা। শিক্ষার্থীকে নিজের চেষ্টায়ই জ্ঞানার্জন করতে হয়। সুতরাং নিজের নিরলস চেষ্টা ও আগ্রহ ব্যতীত সুশিক্ষিত হওয়ার দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। যে ব্যক্তি নিজের চেষ্টায় শিক্ষা অর্জন করেন সেই স্বশিক্ষিত আর স্বশিক্ষিত লোক মাত্রই সুশিক্ষিত। মূলত, নিজের চেষ্টা, আগ্রহ এবং কঠোর অনুশীলন দ্বারা সুশিক্ষা অর্জন করা সম্ভব এবং এটাই স্বশিক্ষা। এভাবে যারা বিদ্যা অর্জন করেন তারাই প্রকৃত শিক্ষিত এবং স্বশিক্ষিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url