...আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম___ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ...

স্বাধীন বাংলার প্রথম নারী চিকিৎসক বেগম কাজী

 ঢাকা মেডিকেলের “প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ” বিভাগের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীন বাংলার প্রথম নারী চিকিৎসক জোহরা বেগম কাজী ১৯১২ সালের ১৫ই অক্টোবর, অখণ্ড ভারতবর্ষের মধ্যপ্রদেশে একটি সুশীল ও সুশিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল মাদারীপুর জেলায়। তাঁর পিতা ছিলেন একজন চিকিৎসক, এবং পরিবারের সমর্থনের কারণে তিনি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার সঙ্গে অগ্রসর হতে পেরেছিলেন। কঠিন সামাজিক প্রেক্ষাপটেও তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি সাইকেল চালানো, টেবিল টেনিস এবং ব্যাডমিন্টন খেলায় পারদর্শী ছিলেন। বাংলা ছাড়াও আরবি, উর্দু, হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষায় অনর্গল লিখতে, পড়তে এবং বলতে পারতেন।

১৯৩৫ সালে জোহরা বেগম কাজী দিল্লির লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন এবং মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এমবিবিএস পরীক্ষায় সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ভাইসরয় পদকে ভূষিত হন। এরপর তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন এবং তৎকালীন ভারতে একজন সহকারী সার্জন হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতালে ১৩ বছর ধরে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। এমনকি মহাত্মা গান্ধীর প্রতিষ্ঠিত আশ্রমেও তিনি অবৈতনিক চিকিৎসা সেবা দিয়েছিলেন।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেন। ঢাকা মেডিকেলে সেই সময়ে নারীদের জন্য প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ ছিল না, তাই ডা. জোহরা বেগম কাজী এই বিভাগ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এছাড়াও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও তিনি প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ চালু করেন।

১৯৫৫ সালে তিনি ইংল্যান্ড থেকে ডিআরসিওজি, এফআরসিওজি এবং এমআরসিওজি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পাকিস্তান থেকে এফসিপিএস ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে এসে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অনারারি কর্নেল হিসেবে কাজ করেছেন এবং অবসরকালে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করেছেন।

জোহরা বেগম কাজী বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন, যেমন তঘমা-ই-পাকিস্তান (১৯৬৪), বেগম রোকেয়া পদক (২০০২) এবং একুশে পদক (২০০৮)। ২০২০ সালের ১৫ই অক্টোবর তাঁর ১০৮তম জন্মদিনে গুগল তাঁকে সম্মান জানিয়ে বিশেষ ডুডল প্রকাশ করে। অবশেষে, এই মহীয়সী নারী ২০০৭ সালের ৭ই নভেম্বর ৯৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

ঢাকা মেডিকেলের “প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ” বিভাগের স্বপ্নদ্রষ্টা জোহরা বেগম কাজী, স্বাধীন বাংলার প্রথম নারী চিকিৎসককে সম্মান জানাতে বিশেষ ডুডল প্রকাশ করেছিল গুগল-ও!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url